আমি ডাক্তার হতে চাই কারণ সবাই স্বপ্ন দেখে, সবাই স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসে। শৈশব বা কৈশোরে মানুষ যে স্বপ্ন দেখে তা কি সব সময় সফল হয় না। তবুও বড় হতে হলে সব মানুষেরই স্বপ্ন থাকতে হয়। শৈশব থেকেই প্রত্যেকের জীবনে একটি লক্ষ্য থাকা উচিত। সাগরের নাবিকরা যেমন মেরু নক্ষত্রকে লক্ষ্য করে বিশাল সাগর পাড়ি দেয়, তেমনি শৈশবেই জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করে জীবনের সাগর পাড়ি দিতে হয়। তাহলে বিপথগামী ও বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা নেই। জীবনে সফলতা পেতে হলে প্রয়োজন সংকল্প। প্রতি বছর ৫০,০০০ এরও বেশি শিক্ষার্থী ডাক্তার ভর্তি পরীক্ষা দেয়। সরকারি, বেসরকারি, ডেন্টাল মিলিয়ে সুযোগ পায় ছয়-সাত হাজার। আর যারা আপনার সাথে পরীক্ষা দেয় তাদের বেশিরভাগই দুটি এ-প্লাস পায়।
তাই অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক এই ভর্তি পরীক্ষায় নিজের দক্ষতা প্রমাণের জন্য স্কুল-কলেজ জীবন থেকে ফলাফল ও পড়াশোনার প্রতি সতর্ক থাকতে হবে। আমরা প্রায়ই কিছু ব্যতিক্রমী ছাত্র-ছাত্রী দেখি, যারা ভর্তি পরীক্ষায় খুব ভালো স্কোর করে কোনো এ-প্লাস না পেয়েই মেডিকেলে চান্স পায়। কিন্তু ব্যতিক্রম কখনো উদাহরণ হতে পারে না। আপনার স্কুল/কলেজ জীবনের একটু সচেতনতা যাতে আপনার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন নিভে না যায়।
আমি ডাক্তার হতে চাই
পৃথিবীর সব মানুষ যেমন দেখতে একরকম নয়, তেমনি সব মানুষের স্বপ্নও একই রকম। বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন স্বপ্ন থাকে। কেউ ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়, কেউ পাইলট, কেউ পুলিশ, কেউ সাংবাদিক। এত পেশার মাঝে আমি যেটা বেছে নিয়েছি সেটা হল, বড় হয়ে আমি ডাক্তার হতে চাই।
আমি ডাক্তার হতে চাই নিজের স্বার্থে না, মানুষের স্বার্থে। লোকে যা খুশি তা বলুক, আমি জানি ডাক্তার একটি মহৎ পেশা। তাদের কল্যাণে নবজাতক শিশুরা নিরাপদে এই পৃথিবীতে পদার্পণ করতে পারছে। মহান সৃষ্টিকর্তার পরই মানুষ রোগমুক্তির জন্যে ডাক্তারদের উপর বিশ্বাস করে, ভরসা করে। ডাক্তাররা মানুষদের নতুন করে জীবনদান দেন। কারও রোগের কষ্ট দূর করা, তাদের জীবনদান করা এর চেয়ে মহৎ কাজ আর কি হতে পারে? তাই আমি ডাক্তার হতে চাই।ডাক্তারদের মহানতা দেখে আমি সর্বদাই অভিভূত হই। আমার জীবন ধন্য হবে যদি আমি ডাক্তার হতে পারি।
অনেক মানুষের মনে ডাক্তারদের নিয়ে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। অনেক মানুষকে বলতে শুনি, ডাক্তাররা টাকা ছাড়া আর কিছু বোঝে না! এই কথাটা বলার আগে তাদের একবার ভাবা উচিত, কারা তাদের আপনজনকে রোগ থেকে রক্ষা করে? এতো যত্ন সহকারে তাদের সুস্থ করে তোলে? ডাক্তাররা সর্বদা পরিশ্রম করেন। প্রথমে ডাক্তার হওয়ার জন্যে, পরবর্তীতে ডাক্তার হওয়ার পর রোগীদের সুস্থ করে তুলতে পরিশ্রম করেন। মানুষের স্বার্থে নিজেদের আরাম-আয়েশ, খুশি সবকিছু বাদ দেন। সবসময় তারা নিজেদের কর্তব্য পালনে সচেষ্ট থাকেন। তারা পরিশ্রমী ও দায়িত্বশীল। তাই আমিও তাদের মতো হতে চাই।
হ্যাঁ, আমি ডাক্তার হতে চাই। ডাক্তার হতে চাই কারণ আমি সেই অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে চাই, যারা টাকার অভাবে আজও সঠিক চিকিৎসা করাতে পারে না। এমন অনেক মানুষ আছে। তারা দিন আনে দিন খায়। অসুস্থ হলে টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারে না। এখনো অনেক মহিলারা গর্ভবতী অবস্থা মৃত্যুবরণ করেন। সঠিক পরিচর্যা আর চিকিৎসার অভাবে অনেক সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পূর্বেই মায়ের গর্ভে মৃত্যুবরণ করে। আমি তাদের সাহায্য করতে চাই। অসহায়, দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই। সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থভাবে অসহায় মানুষের সেবা করতে চাই। সঠিক চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দিতে চাই তাদের কাছে। যাতে করে চিকিৎসার অভাবে কোন মানুষকে মারা যেতে না হয়। যাতে পরিচর্যা আর যত্নের অভাবে কোন গর্ভবতী মাকে অকালে মৃত্যুবরণ করতে না হয়।যাতে কোন শিশু অসাবধানতার কারণে পৃথিবীর আলো দেখার পূর্বেই প্রাণ ত্যাগ না করে। তাই আমি ডাক্তার হতে চাই।
আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলে আজও কিছু হাতুড়ে ডাক্তার রয়েছে। যারা মানুষের চিকিৎসা করার পরিবর্তে ভুল চিকিৎসা করে। আর ভুল চিকিৎসার কারণে অনেক মানুষের অকাল মৃত্যু হয়। রোগী ভালো হওয়ার পরিবর্তে তার অবস্থা আরও খারাপ হয়। ঐ সকল হাতুড়ে ডাক্তারদের হাত থেকে গ্রামবাসীদের রক্ষা করা সকল ডাক্তারদের কর্তব্য। ডাক্তারদের সঠিক চিকিৎসা পেলে তারা হাতুড়ে ডাক্তারদের বিশ্বাস করবে না। তাই আমি ডাক্তার হতে চাই, যাতে গ্রামবাসীদের হাতুড়ে ডাক্তারদের থেকে রক্ষা করতে পারি। তাদের কাছে সঠিক চিকিৎসা আর সেবা পৌঁছে দিতে পারি। ডাক্তার হওয়ার পরই আমি তাদেরকে ভালো করে সাহায্য করতে পারব।
তাছাড়া গ্রামের মানুষ কুসংস্কারাচ্ছন্ন। রোগ সারানোর জন্য এখনও কবিরাজের কাছে যায়। এভাবে ভন্ড কবিরাজদের ভুলের কারণে গ্রামবাসী কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হয়। ডাক্তারদের সঠিক চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য সচেতনতাই পারে গ্রামবাসীদের এমন কুসংস্কার ও ভন্ড কবিরাজদের থেকে রক্ষা করতে। তাই আমিও ডাক্তার হতে চাই। যাতে অন্যান্য ডাক্তারদের সাথে আমিও গ্রামবাসীদের কুসংস্কার দূর করতে পারি।
ডাক্তার হতে করণীয়
একজন এমবিবিএস ডাক্তার হতে হলে আপনাকে যে ধরনের অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতা থাকা প্রয়োজন চলুন জেনে আসি,
শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতাঃ একজন মেডিকেল অফিসার হতে হলে আপনাকে অবশ্যই বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল অনুমোদিত কলেজ থেকে ৫ বছর মেয়াদী এমবিবিএস ডিগ্রি পাশ করতে হবে। সাধারণত বয়স সীমা ২৫-৩০ বছর হতে হবে। ডাক্তারি ডিগ্রির শেষে মেডিকেল হাসপাতালে এক বছরের ইন্টার্নশিপ করতে হবে। একজন ভালো ডাক্তার হতে সাধ্য অনুযায়ী রোগীদের সেবা দেবার মানসিকতা থাকা প্রয়োজন।
লাইসেন্সঃ বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল থেকে চিকিৎসা সেবা দেবার জন্য লাইসেন্স করতে হবে, এটি নেয়া বাধ্যতামূলক।
ডাক্তারের দক্ষতা ও জ্ঞানঃ
ডাক্তারি একটি সেবামূলক পেশা। চিকিৎসা জ্ঞানের পাশাপাশি আলাদা কিছু দক্ষতাও অর্জন করতে হবে আপনাকে। একজন দক্ষ ডাক্তার হতে হলে হাসপাতালগুলোতে আয়োজিত বিভিন্ন সেমিনার, কর্মশালা ও প্রশিক্ষণে অংশ নিতে হবে আপনাকে। তাছাড়া, চিকিৎসার বিশেষ ক্ষেত্রে জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত পড়াশোনা করা প্রয়োজন। এছাড়া, রোগীর সমস্যার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনা। চিকিৎসা বিজ্ঞানের নতুন নতুন পদ্ধতি ও গবেষণা সম্পর্কে খোঁজ রাখা ও তার চর্চা করা। আধুনিক চিকিৎসা প্রযুক্তির ব্যবহার শেখা। হাসপাতাল ও অন্যান্য চিকিৎসা কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে ধারণা থাকা।
ভালো ছাত্রঃ
ভালো ছাত্র মানে শুধু জিপিএ-৫ নয়। একজন ভালো ছাত্র প্রতিটি বিষয় ভালোভাবে জানে, বোঝে এবং পড়ে। ফলে পরীক্ষার ফলও ভালো হয়। কিন্তু আমি শুধু জিপিএ-৫ এর জন্য পড়াশোনা করছি যাতে এটা না হয়। স্কুল-কলেজে বায়োলজি এবং কেমিস্ট্রি ভালোভাবে পড়লে ডাক্তারি পড়ার প্রথম দুই বছর বেশ মজার হবে। স্কুল-কলেজ জীবনের পড়াশুনা মৌলিক। আপনি যদি এটি না জানেন তবে আপনার জন্য মেডিকেল পড়া বোঝা খুব কঠিন হবে।