ইসলামে সুদ কত প্রকার ও কি কি? ইসলামে সুদ কেন হারাম

কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন আর সুদকে হারাম করেছেন;- সূরা আল বাকারা: ২৭৫। রিবা একটি আরবি শব্দ যার অর্থ ইসলামী পরিভাষায় সুদ। রিবা হলো সুদ নামেও পরিচিত। কোন লেনদেনের ক্ষেত্রে, শরীয়াহ দ্বারা সম্মত যেকোন বিনিময় ছাড়া মূলধনের উপর যে কোন চার্জকে সুদ বলা হয়। আবার ইসলামী শরীয়াহ মতে, লেনদেনের ক্ষেত্রে চুক্তির শর্তানুযায়ী শরীয়াহ সম্মত কোনোরুপ বিনিময় ব্যতীত মূলধনের উপর অতিরিক্ত যা কিছু গ্রহণ করা হয় তাকে সুদ বলে। চলুন আজ আমর জানব ইসলামে সুদ কত প্রকার ও কি কি? এবং ইসলামে সুদ কেন হারাম তার সম্পর্কে সকল বিস্তারিত।

ইসলামে সুদ কত প্রকার ও কি কি

ইসলামে সুদ প্রধানত দুই প্রকার:-

  1. রিবা আল নাসিয়াহ বা মেয়াদি সুদ এবং
  2. রিবা আল ফদল।

রিবা আল নাসিয়াহ বা মেয়াদি সুদ:-
রিবা (আভিধানিক অর্থঃ বৃদ্ধি, আধিক্য, পরিবর্ধন, বেশি, স্ফীত, বিকাশ ইত্যাদি)। সুদের আরবি প্রতিশব্দ হলো- রিবা আল নাসিয়াহ। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ঋণ কোনো মুনাফা টানে তাই সুদ।

রিবা আল ফদল:-
পারিভাষিক অর্থে, একই জাতীয় দু’টি জিনিসের মধ্যে একটির বিনিময়ে অতিরিক্ত নেওয়া। যেমন, স্বর্ণের পরিবর্তে সমপরিমাণ স্বর্ণ না নিয়ে অতিরিক্ত স্বর্ণ গ্রহণ করা, এমনিভাবে গমের পরিবর্তে অতিরিক্ত গম নেওয়া ইত্যাদি যেসব জিনিসে প্রচলিতভাবে সুদ হয়ে থাকে। একে বেচাকেনার সাথে সংশ্লিষ্ট সুদ (রিবা আল-বাই‘) বা গোপন সুদ (রিবা আল-খফী) ও বলা হয়।

ইসলামে সুদ কেন হারাম

যে কোনো মুসলমানের জন্য ওয়াজিব হলো সে আহকামে শরিয়াকে মনে-প্রাণে গ্রহণ করবে এবং আল্লাহর যে কোনো বিধানের ওপর সন্তুষ্ট থাকবে। সে বিধান বা আল্লাহর আদেশের হিকমত-কারণ জানা থাক বা না থাক, তাকে অবশ্যই তার আনুগত্য করতে হবে। তবে আল্লাহর আহকামের মধ্যে কোনো কোনো আহকাম এমন আছে যেগুলির কারণ স্পষ্ট যেমন সুদ হারাম হওয়ার কারণ। সুদকে আল্লাহ এ কারণেই হারাম করেছেন যে, এর মাধ্যমে অভাবীদের অভাবকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগানো হয়, একজন গরিব লোকের ওপর অধিকহারে ঋণের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়। এছাড়াও সমাজে সুদের প্রচলনের কারণে পারস্পরিক সুসম্পর্ক নষ্ট হয়, বিশৃংখলা, মারামারি, কাটাকাটি, হানাহানি, খুন-খারাবি ব্যাপকহারে সংঘটিত হয়। সুদের প্রচলনের কারণে মানুষ কাজ-কর্ম, ব্যবসা-বাণিজ্য ছেড়ে দেয়। তারা সুদের আয়ের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে ফলে তারা জমিনে ফসল ফলানোর জন্য কোনো পরিশ্রমকরে না। এসব ছাড়াও সুদের রয়েছে আরো অনেক ক্ষতিকারিতা।

সুদের সঙ্গে ইহুদীদের সম্পর্কের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘বস্তুতঃপূত-পবিত্র বস্তু যা ইহুদীদের জন্য হালাল ছিল তাদের সীমালঙ্ঘন এবং আল্লাহর পথে অনেককে বাধা প্রদান জন্য আমি তা হারাম করে দিয়েছি। এবং তাদের সুদ গ্রহণের জন্যও,যদিও তা তাদের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছিল এবং অন্যায় ভাবে লোকদের ধন-সম্পদ গ্রাস করার জন্য। বস্তুত তাদের মধ্যে যারা কাফের তাদের জন্য তৈরি করে রেখেছি বেদনাদায়ক শাস্তি।

সুদ নিয়ে আল্লাহ পাক এরশাদ করেন:-
“যারা সুদ খায়, তারা কিয়ামতে দন্ডায়মান হবে, যেভাবে দন্ডায়মান হয় ঐ ব্যক্তি, যাকে শয়তান আসরকরে মোহবিষ্ট করে দেয়। তাদের এ অবস্থার কারণ এই যে, তারা বলেছে: ক্রয়-বিক্রয় তো সুদ নেয়ার মতই। অথচ আল্লাহ তা’আলা ক্রয়-বিক্রয় বৈধ করেছেন এবং সুদকে হারাম করেছেন। অত:পর যার কাছে তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে উপদেশ এসেছে এবং সে বিরত হয়েছে, পূর্বে যা হয়ে গেছে, তা তার। তার ব্যাপর আল্লাহর উপর নির্ভশীল। আর যারা পুনরায় সুদ নেয়, তারাই দোযথে যাবে। তারা সেখানে চিরকাল থাকবে। আল্লাহপাক সুদকে নিশ্চহ্ন করেন এবয দান খায়রাতকেবর্ধিত করেন। আল্লাজ পছন্দ করেন না কোন অবিশ্বাসী পাপীকে।” (সূরা বাকারাহ: ২৭৫-২৭৬)

অন্য আয়াতে বলেন:- “আল্লাহ কারো ওপর তার সাধ্যের অতিরিক্ত দায়িত্বের বোঝা চাপিয়ে দেন না” – সূরা বাক্বারা, আয়াত-২৩৩

অন্য আয়াতে এরশাদ হয়েছে:-
“হে ইমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সুদের যে সমস্ত আছে, তা পরিত্যাগ কর, যদি তোমরা ইমানদার হয়ে থাক। অত:পর যদি তোমরা পরিত্যাগ না কর, তবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত হয়ে যাও। কিন্তু যদি তোমরা তাওবা কর, তবে তোমরা নিজের মূলধন পেয়ে যাবে। তোমরা কারও প্রতি অত্যাচার করো না এবং কেউ তোমাদের প্রতি অত্যাচার করবে না।” (সূরা বাকারাহ: ২৭৮-২৭৯)

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ যারা সুদ খেয়েছে তাদের তাওবা করে তা থেকে বিরত থাকতে আল্লাহপাক নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সুদ মুক্ত থাকার তাওফীক দান করুন। আমিন।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *