চাকরির ইন্টারভিউ টিপস- চাকরির মুখোমুখি পর্ব ০১

পড়ালেখা শেষ হতে না হতেই মাথায় চাকরির চিন্তা ঘুরপাক করতে থাকে। কেননা জীবনের কাংখিত স্বপ্নপূরণ করতে হলে প্রফেশনাল লাইফে দ্রুত উন্নতি করতে হবে। নিজের যোগ্যতা প্রমাণের অন্যতম প্রধান জায়গা হচ্ছে ইন্টারভিউ বা ভাইভা বোর্ড। ইন্টারভিউর সময় প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে নিজের যোগ্যতার পরিচয় যেমন দিতে হবে, তেমনি গুরুত্ব দিতে হয় আদব-কায়দা বা ভদ্রতা ও শারীরিক ভাষা তথা বডি ল্যাঙ্গুয়েজের প্রতি। কারণ এর মাধ্যমেই প্রমাণিত হবে আপনার আত্মবিশ্বাস ও স্মার্টনেসের বিষয়টি। ইন্টারভিউ পারফরমেন্স এর উপর নির্ভর করবে আপনি চাকরি টা পাবেন কি পাবেন না ।

চাকরির ইন্টারভিউ টিপস

চাকরির ইন্টারভিউ টিপস

 

 ইন্টারভিউ বা ভাইভা বোর্ডে  আপনার আদব-কায়দা বা ভদ্রতা কেমন হওয়া উচিতঃ 

পোশাকঃ

নিজের যোগ্যতা প্রমানের অন্যতম এবং প্রথম স্থান হচ্ছে ইন্টারভিউ বোর্ড।পোশাক-পরিস্চেদ এর ওপর খুব সচেতন দৃষ্টি থাকা উচিত। একজন নিয়োগকর্তা প্রথমেই নজর দেবেন সাক্ষাৎকার দাতার পোশাক-পরিচ্ছদের ওপর। পোশাক-পরিচ্ছদ দেখেই তিনি সাক্ষাৎদাতার স্মার্টনেস, বাহ্যিক গুণাবলি, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য অনেকটা মেপে নেন।ছেলেদের পোশাকের ক্ষেত্রে অবশ্যই তা ফরমাল হতে হবে এবং মার্জিত এবং রুচিশীল শার্ট পড়বেন। অবশ্যই উগ্র রং এর শার্ট পরিহার করতে হবে।
মেয়েরা দেশীয় পোশাক পরতে পারেন। তবে হালকা রঙের সাধারণ সালোয়ার কামিজ পরে যাবেন, তা যেনো আঁটসাঁট না হয়। চুল ছেড়ে না রেখে পনিটেইল করে বেঁধে গেলে মার্জিত দেখাবে।

ইন্টারভিউ শুরু হলেঃ 

১।ইন্টারভিউ বোর্ডে ঢোকার সময় অনুমতি নিয়ে ঢুকে সালাম দিবেন। অতি চটপটে ভাব বা বিনয়ী ভাব দেখাতে যাবেন না। অনেকে খুব আপসেট থাকে এটাও বুঝতে দেয়া যাবে না।

২।যতক্ষন না আপনাকে বসতে বলা হয় ততক্ষন অপেক্ষা করুন। বসতে বলার পর ধন্যবাদ জানাবেন।

৩।চেয়ারে বসার সময় হালকা করে চেয়ারের পিঠে হেলান দিয়ে সোজা হয়ে বসুন, অহেতুক নড়াচড়া করবেন না বা পা নাচাবেন না।প্রথমে প্রয়োজন আত্মবিশ্বাস। আত্মবিশ্বাসই আপনাকে সফলতা অর্জনে অনেক এগিয়ে দেবে।

৪।সাক্ষাৎকারে যাওয়ার আগে যে প্রতিষ্ঠানে চাকরির আবেদন করেছেন, সে প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা নিন। কী ধরনের কাজ হয় জানতে তাদের ওয়েবসাইট দেখুন। প্রশ্নের উত্তর যথাসম্ভব সহজ, সরল ও সংক্ষিপ্তভাবে দিন।

৫।কোনো প্রশ্নের উত্তর জানা না থাকলে সরাসরি বলুন, আমতা আমতা করে সময় নষ্ট করবেন না।
উত্তর না জানা প্রশ্নেরঃ “সরি সার/মেডাম, উত্তরটি আমার জানা নেই”, নেগেটিভ উত্তর হলেও পসেটিভ ভাবেই নিলেন কারণ, মুখভঙ্গিতে সামন্য দুঃখ প্রকাশ করা হাসি (হতাশা, ভয় নয়), গলার স্বর এ আম্তবিশ্বাসের পূর্ণতা |
ভাসাভাসা জানা প্রশ্নের উত্তর ঃ”সার/মেডাম, এ ব্যপারে সামন্যই জানি, যতটুকু জানি শেয়ার করছি, বাকিটা আপনাদের কাছ থেকে জেনে নিতে চাচ্ছি”- বাচন ভঙ্গিতে ব্যক্তিত্বের পূর্ণতা আবশ্যক, পুরোটা না পারার আফসোস বা হতাশা অনাবশ্যক!”

৬।আপনাকে বাংলায় প্রশ্ন করা হলে, ইংরেজীতে উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন নেই। একইভাবে ইংরেজিতে প্রশ্ন করলে ইংরেজিতেই উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবেন না নিজের সম্বন্ধে কিছু বলুন, আপনার দুর্বলতা কী, কেন আমরা আপনাকে বেছে নেব—এরকম কিছু প্রশ্নের উত্তর আগে থেকেই ঠিক করে রাখুন। এ ধরনের প্রশ্নে হতভম্ব হয়ে পড়ার কারণ নেই। এগুলির সাহায্যে আপনার আত্মবিশ্বাস কিংবা দূরদৃষ্টি বা অধ্যাবসায় কতটা মজবুত, সেটাই পরীক্ষা করেন প্রশ্নকর্তারা। এই প্রশ্নের উত্তর বুদ্ধি করে দিলে ভাল।

 

শারীরিক ভাষা যেমন হওয়া উচিতঃ

১. আত্মবিশ্বাস দেখান : সোজা হয়ে বসুন আর হাসুন। তবে খেয়াল রাখবেন বসাটি যেন মূর্তির মতো না হয়। আর হাসিটি অবশ্যই দাত বের করে বা শব্দ করে নয়।

২. হাত মেলাতে পারেন, তবে পরিবেশ বুঝে। রুমে ঢুকে হুট করে হাত বাড়িয়ে না দেয়াই ভালো। ভাইভা বোর্ডের সদস্যদের মন-মেজাজের দিকে লক্ষ রাখুন।

৩. উপস্থিত সদস্যদের সাথে চোখ মেলান (eye contact)। তবে কারো দিকে একভাবে তাকিয়ে থাকবেন না। সবার সাথে অন্তত একবার হলেও চোখ মেলাবেন।

৪. কাঁধ শিথিল রাখুন। কারণ আপনার কাঁধ দেখেই বোঝা যায় আপনি চিন্তাগ্রস্থ কি-না।

৫. আত্মবিশ্বাসের সাথে আপনার হাত নাড়াচাড়া করুন। তবে আঙুল টানাটানি বা ফোটানো থেকে বিরত থাকুন। কারণ এতে মনে হবে আপনি খুব উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।

৬. বারবার নিজের ফোন বা ঘড়ির দিকে তাকাবেন না। কিংবা মোবাইলের এসএমএস অথবা টেবিলের ওপরে থাকা কোনো জিনিসপত্র নাড়াচাড়া করবেন না।

৭. ইন্টারভিউ বা ভাইভা বোর্ডের কোনো সদস্য যখন কিছি বলবেন, তখন মাথা নাড়িয়ে সায় দিন। এতে মনে হবে যে আপনি তার কথা শুনছেন।

৮. জবুথবু হয়ে অথবা খুব বেশি হাত-পা ছড়িয়ে বসবেন না। এতে মনে হবে আপনি অনেক আরামে আছেন।

৯. বারবার হাত দিয়ে মুখ মোছা বা মাথায় হাত দিয়ে চুল ঠিক করার চেষ্টা করবেন না।

১০. অনেকের বদ অভ্যাস থাকে চেয়ারে বসে পা নাড়ানোর। ভাইভাবোর্ডে বিষয়টি থেকে অবশ্যই বিরত থাকুন।

 

যে কাজগুলো করবেন নাঃ

১। ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে কখনোই দেরিতে পৌঁছাবেন না। ইন্টারভিউতে সময় মেনে চলা খুব-ই জরুরী। আবার খুব তাড়াতাড়িও পৌঁছে যাবেন না। এতে আপনার গুরুত্ব কমে যায়। ১০-১৫ মিনিট আগে ইন্টারভিউ-এর জায়গায় পৌঁছানো উত্তম।

২।ইন্টারভিউ টিপস এর আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, যে কোম্পানিতে ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছেন তার সম্বন্ধে ভাল করে জেনে তারপর ইন্টারভিউ দিতে যান। অন্ধের মত ইন্টারভিউ দিতে যাবেন না।

৩।ইন্টারভিউ টিপস এর আর একটু অপরিহার্য বিষয় হচ্ছে মার্জিত পোশাক নির্বাচন। জমকালো বিয়ে বাড়ির পোশাক পরে ইন্টারভিউ দিতে যাবেন না।

৪।ইন্টারভিউ দেয়ার সময় মোবাইল ফোন অন রাখবেন না।

৫।যিনি প্রশ্ন করছেন, তার দিকে তাকিয়ে উত্তর দিন। অন্য দিকে তাকিয়ে কথা বলবেন না।

৬।আগের চাকরি বা বসের সম্বন্ধে ইন্টারভিউ বোর্ডে কোনরূপ খারাপ বা নেতিবাচক কথা বলবেন না। এতে আপনার প্রতি তারা খারাপ ধারণা পোষণ করতে পারে।

৭। ইন্টারভিউ বোর্ডে আপনার কিছু জানার থাকলে জিজ্ঞেস করবেন। এতে তারা বুঝবে যে আপনি চাকরিটি করতে আগ্রহী।

৮। ইন্টারভিউ টিপস এর আর একটি দরকারি ব্যাপার হচ্ছে আপনার CV। CV তে যেন কোন মিথ্যা তথ্য না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখবেন। ইন্টারভিউ বোর্ডে আপনার CV নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

৯। নিজের পারিবারিক বা ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে ইন্টারভিউ বোর্ডে আলোচনা করবেন না। আবার যারা ইন্টারভিউ নিচ্ছেন, জোর করে তাদের বন্ধু হয়ে উঠবেন না। প্রয়োজনের অতিরিক্ত কথা আপনার চাকরি পাওয়ার পরিপন্থী হয়ে দাড়াতে পারে।

১০।ভদ্রতা বা শিষ্টাচার সম্পর্কে সচেতন করা আমাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইন্টারভিউ টিপস। যেমন- আপনাকে বসতে বলার আগে বসবেন না।

১১।যতক্ষণ পর্যন্ত চাকরি পাওয়ার সমর্থন না আসছে ততক্ষণ পর্যন্ত টাকা বা ছুটির ব্যাপারে কথা বলবেন না।

১২।অনেকে লিখিত পরিক্ষা বা ইন্টারভিউ খারাপ হয়েছে মনে করে পরে যেদিন যাওয়ার কথা থাকে সেদিন আর যান না। এটা কখনোই করবেন না! অনেক সময় ইন্টারভিউারদের কথা শুনে আপনার মনেই হতে পারে আপনার ইন্টারভিউ ভাল হয় নি। কিন্তু অনেক সময় যারা ইন্টারভিউ যারা নেন তারা আপনাকে বুঝতে দিতে চান না যে আপনাকে তাদের পছন্দ হয়েছে। তাই, কোন সুযোগ হাতছাড়া করবেন না।

ইন্টারভিউয়ে প্রশ্নকর্তার প্রশ্নই বলে দেবে আপনার চাকরি হবে কিনা। তবে কিছু কিছু লক্ষণ আছে দেখলেই বোঝা যাবে চাকরি অনিশ্চিত। সেগুলো নিচে দেয়া হল-

১) খেয়াল রাখুন কতক্ষণ ধরে ইন্টারভিউ নেয়া হচ্ছে? সেটা যদি খুব অল্পসময়ের জন্য হয় তাহলে বুঝতে হবে চাকরিটা অনিশ্চিত। সেক্ষেত্রে আপনাকে শুধু নামধাম জিজ্ঞেস করে বিদায় করে দেবে।

২) যে পদের জন্য আপনি ইন্টারভিউ দিতে এসেছেন, সে বিষয়ে কোনো প্রশ্ন নিয়ে আলোচনাই করছে না, বরং অবান্তর কিছু প্রশ্ন করেছে? এর অর্থ হল আপনার চাকরিটা হচ্ছে না। শুধু একটু সময় নষ্ট করে ছেড়ে দেবেন।

৩) পরপর প্রশ্ন করা হচ্ছে কিনা, সেটা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যদি ঠিকঠাক প্রশ্ন আসে, তাহলে ঠিকই আছে। কিন্তু যদি একই প্রশ্ন পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে করতে থাকে তাহলে কিন্তু সমস্যা হচ্ছে বুঝে নিতে হবে। আপনাকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা চলছে।

৪) আপনাকে যদি নেয়ার ইচ্ছে থাকে, তাহলে যারা নিচ্ছেন তারা ইন্টারভিউয়ে চোখে চোখ রেখে কথা বলবেন। আপনার চোখে চোখ রেখে কথা না বললে বুঝতে হবে সমস্যা রয়েছে।

৫) খেয়াল রাখুন, যিনি ইন্টারভিউ নিচ্ছেন, তার ভাবভঙ্গি কেমন। তিনি যদি পেছনে গা এলিয়ে দেন, আপনার কথা শুনেও না শোনার ভান করেন, তাহলে বুঝে নিন আপনার চাকরিটা আর হচ্ছে না।

৬) প্রশ্নকর্তা যদি আপনার মঙ্গল কামনা করে তাহলে বুঝবেন সেটা মোটেও মঙ্গলের জন্য নয়। সামান্য কথা বলার পরই আপনাকে ‘ধন্যবাদ’ দেয়া হল এবং আপনার সঙ্গে পরে যোগাযোগ করা হবে। আপনার মঙ্গল কামনা করছি। এ ধরনের কথা বললে বুঝবেন সেই যোগাযোগ আর হবে না।

৭) আপনি কেন প্রতিষ্ঠানটিতে যোগ দিতে চান? ভবিষ্যতে আপনি নিজেকে কোন জায়গায় দেখতে চান? এ ধরনের প্রশ্ন না করলে বুঝবেন ইন্টারভিউ ভালো হচ্ছে না।

৮) ইন্টারভিউ শেষে সাধারণত একটি হাসি বিনিময় হয়। ইন্টারভিউ ভালো হলে সেই হাসি হয় উজ্জ্বল। কিন্তু খারাপ হলে হাসি হয় সৌজন্যতার কিংবা বিদ্রুপের।


চাকরির ইন্টারভিউ দেওয়ার কৌশল,চাকরির ইন্টারভিউ এর প্রশ্ন,চাকরির ইন্টারভিউ টিপস ,চাকরির ইন্টারভিউ প্রশ্ন ,
চাকরির ইন্টারভিউ প্রশ্ন উত্তর ,চাকরির ইন্টারভিউ পোশাক ,ইংরেজিতে চাকরির ইন্টারভিউ ,সরকারি চাকরির ইন্টারভিউ প্রশ্ন ,
পুলিশের চাকরির ইন্টারভিউ ,বুয়েট চাকরির ইন্টারভিউ ,সরকারি চাকরির ইন্টারভিউ ,বিডি নেক্সট ওয়েব,bd nextweb,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *