স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। তবে স্থুলতা অবশ্যই ভালো স্বাস্থ্যের লক্ষন না।ভালো স্বাস্থ্য মানে সুস্থ একটি দেহ ও প্রফুল্ল মন। আর সুস্থ শরীরের জন্য দেহের ওজন সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রন করতে হয়। বডি মাস ইনডেক্স ( বিএমআই) হিসাব করে ওজন বেশি-কমের সঠিক ধারনা পাওয়া যায়। আর ওজন বেড়ে গেলে তা অবশ্যই কমিয়ে সঠিক মাত্রায় আনা উচিত।
দ্রুত ওজন কমানোর উপায়
শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমানোর জন্য স্বাস্থ্য সচেতনরা কতকিছুই না করে থাকেন। বিশেষ করে পরিমিত পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করে ডায়েট কন্ট্রোল করা এর অন্যতম একটি উপায়। শরীরের বাড়তি ওজন ঝেড়ে ফেলতে ওজন কমানোর ডায়েট বেশ কার্যকর। তবে ডায়েট করতে হবে নিয়মকানুন মেনে, জেনে-বুঝে পুষ্টিবিদের পরামর্শ অনুযায়ী। নয়তো কাঙ্ক্ষিত সুফল পাওয়া যাবে না ও ওজন কমাতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন।
প্রথমেই আপনাকে মনে রাখতে হবে ডায়েট মানেই না খেয়ে থাকা নয়। ডায়েট মানে পরিমিত পরিমাণে সুষম খাবার গ্রহণ। ডায়েটে পুষ্টিকর খাবার সঠিক পরিমাণে গ্রহণ না করলে কিংবা শুধু কম খেয়ে থাকলে শরীরের ওপর এর প্রভাব পড়বে। ওজন কমানোর প্রয়োজন থাকলে কিংবা নির্দিষ্ট ওজন ধরে রাখতে চাইলে অবশ্যই বয়স, ওজন, উচ্চতা এবং কতটুকু ওজন কমাতে হবে সেই অনুযায়ী ডায়েট চার্ট তৈরি করতে হবে।
ওজন হ্রাসকারী খাদ্যে ক্যালসিয়াম ও লোহার অভাব ঘটতে পারে। এক্ষেত্রে ডিম ও কলিজা লোহার চাহিদা পূরণ করবে। চেষ্টা করবেন লবণবর্জিত খাদ্য গ্রহণ করতে।
শরবত, কোকা-কোলা, ফান্টা ইত্যাদি মৃদু পানীয়, সব রকম মিষ্টি, তেলে ভাজা খাবার, চর্বিযুক্ত মাংস, তৈলাক্ত মাছ, বাদাম, শুকনা ফল, ঘি, মাখন, সর ইত্যাদি পরিহার করা প্রয়োজন। শর্করা ও চর্বি জাতীয় খাদ্য ক্যালরির প্রধান উৎস। অধিক চর্বিযুক্ত কম ক্যালরির খাদ্যে স্থূল ব্যক্তির ওজন খুব দ্রুত কমে।
ওজন কমাতে পরিশ্রম ও নিয়মিত ব্যায়ামের পাশাপাশি খাদ্য তালিকায় পরিবর্তন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সকাল: দুধ ছাড়া চা বা কফি, দুটো আটার রুটি, এক বাটি সবজি সিদ্ধ, এক বাটি কাঁচা শসা। শসা ওজন কমাতে জাদুর মতো কাজ করে।
মধ্যদুপুরঃ একটি ডিমের সাদা অংশ ও টক জাতীয় ফল।
দুপুর : ৫০-৭০ গ্রাম চালের ভাত। মাছ বা মুরগির ঝোল এক বাটি। এক বাটি সবজি ও শাক, শসার সালাদ, এক বাটি ডাল এবং ২৫০ গ্রাম টক দই।
বিকাল : দুধ ছাড়া চা বা কফি, মুড়ি বা বিস্কুট দুটি বা এক বাটি মুজিলি।
রাত : আটার রুটি দুটা, এক বাটি সবুজ তরকারি, এক বাটি ডাল, টকদই দিয়ে এক বাটি সালাদ।
দৈনিক এক গ্রাম প্রোটিন গ্রহণ করলে দেহে প্রোটিনের অভাব থাকে না। ৬০ কিলোগ্রাম ওজনবিশিষ্ট ব্যক্তির খাদ্য ৬০ গ্রাম প্রোটিন হলেই ভালো হয়। প্রতিমাসে একদিন ওজন মাপতে হবে, লক্ষ্য রাখতে হবে ওজন বাড়ার হার কম না বেশি। ওজন বৃদ্ধি অসুখের লক্ষণ। মেদ, ভুঁড়ি বা অতিরিক্ত ওজন কোনোটাই সুস্বাস্থ্যের লক্ষণ নয়। বরং নানা অসুখের কারণ হয়ে দেখা দেয় একথা সব সময় মনে রাখবেন এবং স্বাস্থ্যসচেতন হবেন।
ওজন কমানোর ডায়েট করার সময় চিনি যুক্ত খাবার, বেশি তেলে ভাজা পোড়া খাবার, মিষ্টি জাতীয় পানীয়, ট্রান্স ফ্যাট যুক্ত খাবার, প্রানিজ ফ্যাট, রিফাইন্ড করা বা চকচকে সাদা ময়দার তৈরি খাবার, মধু বা সিরাপ জাতীয় খাবার, মিষ্টি জাতীয় শুকনা ফল এবং প্রক্রিয়া জাত করা স্নাক ফুড, স্টার্চ যুক্ত সবজি (যেমন- আলু, ভুট্টা, মিষ্টি আলু) কখনই খাবেন না।
আঁশবহুল খাবার যেমন ডাল, শাক, সবজি, ঢেঁকি ছাঁটা চাল, গমের আটার রুটি, টকফল বেশি খেতে হবে। বেশি বেশি ক্রুসিফেরাস ভেজিটেবিল (যেমন পাতা কপি, ফুল কপি) শিম জাতীয় সবজি, টমেটো, গাজর, পাতাযুক্ত শাক, মশুর ডাল, বাদাম খেতে হবে।
সকালে ঘুম থেকে উঠে ব্রাশ করার পর খালি পেটে কমপক্ষে ২ গ্লাস পানি পান করে নিবেন, আর সারাদিন অবশ্যই বেশি বেশি পানি পান করতে হবে।
ওজন কমানোর জন্য স্বাস্থ্য সম্মত ডায়েট এর পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমানো এবং দৈনিক ৪০ – ৪৫ মিনিট হাটাহাটি বা ব্যায়াম করা দরকার। ওজন কমানোর গতিকে ত্বরান্বিত করার জন্য দৈনিক কমপক্ষে ৮ ঘন্টা ঘুমানো দরকার, কারণ পর্যাপ্ত ঘুম শরীরের মেটাবোলিজম বাড়িয়ে দেয়।
ওজন কমানোর জন্য ১২ টি নিয়ম ।যেটা অনুসরন করলে সহজে আপনার ওজন কমে যেতে পারে ঃ-
১. সকালের নাস্তা এড়িয়ে যাবেন না ঃ সকালের নাস্তা এড়িয়ে যাওয়া আপনাকে ওজন কমাতে সহায়তা করবে না। আপনি প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুলি বাদ দিতে পারেন এবং আপনি ক্ষুধার্ত বোধ করছেন বলে আপনি সারা দিন ধরে আরও বেশি খাবার খান। পাঁ
২. নিয়মিত খাবার খান ঃ দিনের বেলা নিয়মিত খাওয়া দ্রুত হারে ক্যালোরি বার্ন করতে সহায়তা করে। এটি চর্বি এবং চিনিযুক্ত উচ্চ খাবারগুলিতে জলখাবার প্রলোভনকে হ্রাস করে। গুরুতরভাবে খাওয়ার সম্পর্কে আরও জানুন।
৩. প্রচুর পরিমাণে ফল এবং নিরামিষভোজ খান ঃ ফল এবং ভেজ ক্যালরি এবং ফ্যাট কম, এবং ফাইবার উচ্চ – সফল ওজন হ্রাস জন্য 3 প্রয়োজনীয় উপাদান। এগুলিতে প্রচুর ভিটামিন এবং খনিজ থাকে।
৪। আরও সক্রিয় হন সক্রিয় হওয়া ঃ ওজন হ্রাস এবং এটিকে দূরে রাখার মূল চাবিকাঠি। অসংখ্য স্বাস্থ্য বেনিফিট সরবরাহ করার পাশাপাশি, ব্যায়াম অতিরিক্ত ডায়েট ক্যালোরিগুলি পোড়াতে সহায়তা করতে পারে যা আপনি একা ডায়েটের মাধ্যমে কাটতে পারবেন না। আপনি যে ক্রিয়াকলাপ উপভোগ করেছেন এবং আপনার রুটিনের সাথে মানিয়ে নিতে সক্ষম হন সেগুলি সন্ধান করুন।
৫. প্রচুর পরিমাণে জল পান করুন ঃ মানুষ কখনও কখনও ক্ষুধা সঙ্গে তৃষ্ণা বিভ্রান্ত। এক গ্লাস জলে যখন আপনার প্রয়োজন হয় তখন আপনি অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ করতে পারেন।
৬।উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার খান ঃ প্রচুর পরিমাণে ফাইবারযুক্ত খাবার আপনাকে পূর্ণ বজায় রাখতে সহায়তা করতে পারে যা ওজন হ্রাস করার জন্য উপযুক্ত। ফাইবার কেবল উদ্ভিদের খাদ্য যেমন ফল এবং নিরামিষাশী, ওটস, আস্ত রুটি, বাদামি চাল এবং পাস্তা এবং সিম, মটর এবং মসুর জাতীয় খাবারে পাওয়া যায়।
৭।খাদ্যের মান সম্পর্কে জানুন ঃ খাদ্যের মান কেমন তা জানলে আপনাকে স্বাস্থ্যকর বিকল্পগুলি বেছে নিতে সহায়তা করতে পারে। ওজন কমানোর পরিকল্পনায় কোনও নির্দিষ্ট খাবার আপনার প্রতিদিনের ক্যালোরি ভাতার সাথে কীভাবে ফিট করে তা কার্যকর করার জন্য ক্যালোরির তথ্য ব্যবহার করুন।
৮। একটি ছোট প্লেট ব্যবহার করুন ঃ ছোট প্লেট ব্যবহার করা আপনাকে আরও ছোট অংশ খেতে সহায়তা করতে পারে। ছোট ছোট প্লেট এবং বাটি ব্যবহার করে আপনি ক্ষুধার্ত না হয়ে ধীরে ধীরে ছোট অংশগুলি খেতে অভ্যস্ত হতে পারেন।
৯।খাবার নিষিদ্ধ করবেন না ঃ আপনার ওজন হ্রাস পরিকল্পনা থেকে কোনও খাবার নিষিদ্ধ করবেন না, বিশেষত আপনার পছন্দসই। খাবার নিষিদ্ধ করা আপনাকে কেবল তাদের আরও আকুল করে তুলবে।
১০। জাঙ্ক ফুড এড়িয়ে চলা ঃ প্রলোভন এড়াতে, জাঙ্ক ফুড – যেমন চকোলেট, বিস্কুট, খাস্তা এবং মিষ্টি ফিজি পানীয়গুলি ঘরে বসে রাখার চেষ্টা করবেন না। পরিবর্তে স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস যেমন ফল, আনসলেটেড রাইস কেক, ওট কেক, আনসাল্টেড বা স্যুইচেনড পপকর্ন এবং ফলের রস বেছে নিন।
১১. অ্যালকোহল পরিহার করুন ঃসময়ের সাথে সাথে বেশি পরিমাণে মদ্যপান করা ওজন বাড়াতে সহজেই অবদান রাখতে পারে। তাই অ্যালকোহল পরিহার করার চেষ্টা করুন ।
১২. আপনার খাবারের পরিকল্পনা করুন ঃ সপ্তাহের সাত দিনের খাবার তালিকা করুন ।প্রতিদিন সেই তালিকা অনুযায়ী খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন।এবং সেই তালিকা মেনে চলার চেষ্টা করুন।
দ্রুত ওজন কমানোর উপায়,দ্রুত ওজন কমানোর উপায় কি,druto ojon komanor upay ,মেয়েদের দ্রুত ওজন কমানোর উপায়,
দ্রুত ওজন কমানোর সহজ উপায়,খুব দ্রুত ওজন কমানোর উপায় ,অতি দ্রুত ওজন কমানোর উপায় ,দ্রুত ওজন কমানোর ঘরোয়া উপায় ,দ্রুত ওজন কমানোর কার্যকরী উপায় ,রমজানে দ্রুত ওজন কমানোর উপায় ,বিডি নেক্সট ওয়েব,bdnextweb ,