পৃথিবীর ভূ-অভ্যন্তরে শিলায় সঞ্চিত শক্তির মুক্তির ফলে পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠ ক্ষণিকের জন্য মুহূর্তের মধ্যে কম্পিত হয় এবং পৃথিবীর ভূত্বকের কিছু অংশ আন্দোলিত হয়। পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠ ক্ষণস্থায়ী কম্পনের এই রূপকে ভূমিকম্প বলা হয়। পৃথিবীর ভূ-অভ্যন্তরে কম্পনশীল তরঙ্গ দ্বারা উৎপন্ন শক্তি ভূমিকম্পের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। চলুন আজ আমরা জানবো ভুমিকম্প কেন হয়? ভূমিকম্প হলে কি কি করা উচিত? সে সম্পর্কে কিছু তথ্য ও বিস্তারিত
বাংলাদেশ ও তৎসংলগ্ন এলাকার ৮৫ বছরের ভূমিকম্পের সংক্ষিপ্ত রেকর্ড নিম্নে আলোচনা করা হলো :
ভূমিকম্পের সাল ও তারিখ | ভূমিকম্পের বাংলাদেশ ও তৎসংলগ্ন এলাকা | ভূমিকম্পের মাত্রা |
---|---|---|
১৮৮৫ সাল, ১৪ জুলাই | মানিকগঞ্জ, বাংলাদেশ | ৭+ রিখটার স্কেল |
১৯১৮ সাল, ৮ জুলাই | শ্রীমঙ্গল, বাংলাদেশ | ৭.৬ রিখটার স্কেল |
১৯৩০ সাল, ২ জুলাই | ধুবড়ি, আসাম, ভারত | ৭.১ রিখটার স্কেল |
১৯৩৪ সাল, ১৫ জানুয়ারি | বিহার, ভারত | ৮.৩ রিখটার স্কেল |
১৯৩৪ সাল, ৩ জুলাই | আসাম, ভারত | ৭.১ রিখটার স্কেল |
১৯৫০ সাল, ১৫ আগস্ট | আসাম, ভারত | ৮.৭ রিখটার স্কেল |
১৯৯৭ সাল, ২২ নভেম্বর | চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ | ৬.০ রিখটার স্কেল |
১৯৯৯ সাল, জুলাই | মহেশখালি দ্বীপ, বাংলাদেশ | ৫.২ রিখটার স্কেল |
২০০২ সাল | বাংলাদেশের চট্টগ্রামে ৪০ বার হয় | – |
২০০৩ সাল, ২৭ জুলাই | বরকল উপজেলা, রাঙামাটি, বাংলাদেশ | ৫.১ রিখটার স্কেল |
ভুমিকম্প কেন হয়
সাধারণ জ্ঞানে ভূমিকম্প শব্দটি দ্বারা যে কোন প্রকার ভূকম্পন জনিত ঘটনাকে বোঝায় – সেটা প্রাকৃতিক অথবা মনুষ্য সৃষ্ট যাই হোক না কেন। বেশিরভাগ ভূমিকম্পের কারণ হল ভূগর্ভে ফাটল ও স্তরচ্যুতি হওয়া কিন্তু সেটা অন্যান্য কারণ যেমন অগ্ন্যুৎপাত, ভূমিধস, খনিতে বিষ্ফোরণ বা ভূগর্ভস্থ নিউক্লিয়ার গবেষণায় ঘটানো আণবিক পরীক্ষা থেকেও হতে পারে।
ভূমিকম্প উৎপত্তির প্রধান কারণ গুলি নিম্নে আলোচনা করা হলো:
ভূমিকম্পের প্রধান কারণ গুলিকে প্রধানত দু-ভাগে ভাগ করা যায় —
( ক ) প্রাকৃতিক কারণ এবং
( খ ) মানুষের ক্রিয়াকলাপ বা অপ্রাকৃতিক কারণ ।
ভূমিকম্পের প্রাকৃতিক কারণঃ
প্রাকৃতির কারণে যে ভূমিকম্প সৃষ্টি হয় তাকে প্রাকৃতিক ভূমিকম্প বলে। এই প্রাকৃতিক ভূমিকম্প আবার প্রাকৃতির বিভিন্ন কারণে সৃষ্টি হয় চলুন কারণ গুলি জেনে আসি,
প্লেটের কারণে
ভূতাত্ত্বিকদের মতে, ভূত্বকটি বেশ কয়েকটি সঞ্চালিত ‘প্লেট’ নিয়ে গঠিত। যখন সঞ্চালন প্লেটের দুটি কোণ একে অপরের কাছাকাছি চলে আসে, তখন সংযোগকারী রেখা লাইন বরাবর শিলাচ্যুতি ঘটে এবং তখন ভূমিকম্প সৃষ্টি হয়।
আগ্নেয়গিরির কারণে :
কখনো কখনো আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ ও গলিত লাভা উৎক্ষিপ্ত হবার কারণে ভূমিকম্পের সৃষ্টি হতে পারে।
শিলাচ্যুতিজনিত কারণে :
কখনো কখনো পাহাড় কিংবা উচু স্থান থেকে বৃহৎ পরিসরে শিলাচ্যুতিজনিত কারণে ভূমিকম্প হতে পারে।
ভূপাতে কারণে :
কোনো কারণে পাহাড়-পর্বত হতে বৃহৎ শিলাখণ্ড ভূত্বকের ওপর ধসে পড়ে ভূমিকম্প হয়। সাধারণত ভাঁজ পর্বতের নিকট অধিক ভূমিকম্প হয়।
ভূমির তাপ বিকিরণের কারণে :
ভূত্বক তাপ বিকিরণ করে সংকুচিত হয়ে পড়লে ফাটল ও ভাঁজের সৃষ্টি হয়ে ভূমিকম্প হয়।
ভূগর্ভস্থ বাষ্প হওয়ার কারণে :
নানা কারণে ভূগর্ভে বাষ্পের সৃষ্টি হয়। এই বাষ্প ক্রমাগত বৃদ্ধি পেলে তা ভূত্বকের নিম্নভাগ ধাক্কা দেয়; ফলে প্রচণ্ড ভূকম্পন অনুভূত হয়। এবং ভূমিকম্প হয়।
হিমবাহের প্রভাবে :
কখনো কখনো প্রকাণ্ড হিমবাহ পর্বতগাত্র হতে হঠাৎ নিচে পতিত হয়। এতে ভূকম্প কেঁপে ওঠে এবং ভূমিকম্প হয়।
ভূমিকম্পে মানুষের ক্রিয়াকলাপ বা অপ্রাকৃতিক কারণঃ
মানুষের ক্রিয়াকলাপের ফলে যে সব ভূমিকম্প হয়ে থাকে তাকে অপ্রাকৃতিক ভূমিকম্প বলে। এই অপ্রাকৃতিক ভূমিকম্প আবার বিভিন্ন কারণে সৃষ্টি হয় চলুন কারণ গুলি জেনে আসি,
নদীতে বাঁধ
নদীতে বাঁধ দিয়ে জলাধার সৃষ্টি করলে ওপরের জলরাশির চাপে নীচের শিলাস্তরের স্থানচ্যুতি ঘটে , এর ফলে ভূমিকম্প হয় ।
বােমার বিস্ফোরণ
ভূগর্ভে পারমাণবিক বােমার বিস্ফোরণ ঘটানাে হলে ভূমিকম্প হতে পারে। এবং ডিনামাইট জাতীয় বিস্ফোরকের সাহায্যে যখন পাহাড় কেটে রাস্তা , টানেল প্রভৃতি তৈরি করা হয় , সেই বিস্ফোরণের সময় আশপাশের এলাকায় ভূমিকম্প হতে পারে ।
ভূমিকম্প হলে কি কি করা উচিত
ভূমিকম্প হলে আমাদের কি কি করা উচিৎ চলুন সে সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে আসি;
ভূমিকম্পের আগে :
(ক) বিদ্যুৎ ও গ্যাসলাইন বন্ধ করার নিয়মকানুন পরিবারের সবার জেনে রাখা।
(খ) ঘরের ওপরের তাকে ভারী জিনিসপত্র না রাখা, পরিবারের সব সদস্যের জন্য হেলমেট
রাখা।
(গ) পরিকল্পিত বাড়িঘর নির্মাণের জন্য বিল্ডিং কোড মেনে চলা। ভবনের উচ্চতা ও লোডের
হিসাব অনুযায়ী শক্ত ভিত দেওয়া, রেইন ফোর্সড কংক্রিট ব্যবহার, পাশের বাড়ি থেকে
নিরাপদ দূরত্বে বাড়ি নির্মাণ, গ্যাস ও বিদ্যুৎ লাইন নিরাপদভাবে স্থাপন করা। গর্ত ও নরম
মাটিতে ভবন নির্মাণ না করা।
ভূমিকম্প চলাকালে :
(ক) নিজেকে ধীরস্থির ও শান্ত রাখা, বাড়ির বাইরে থাকলে ঘরে প্রবেশ না করা।
(খ) একতলা দালান হলে দৌড়ে বাইরে চলে যাওয়া। তা ছাড়া বহুতল দালানের ভেতরে
থাকলে টেবিল বা খাটের নিচে চলে যাওয়া ও কাচের জিনিসের কাছ থেকে দূরে থাকা।
লিফট ব্যবহার না করা।
(গ) উঁচু দালানের জানালা বা ছাদ থেকে লাফ দিয়ে নামার চেষ্টা না করা। ভূমি ধসে পড়ার
সম্ভাবনা আছে এমন উঁচু ভূমি থেকে দূরে থাকা।
(ঘ) ভূমিকম্পের সময় বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা।
ভূমিকম্পের পরে :
(ক) ক্ষতিগ্রস্ত ভবন থেকে ধীরস্থির ও শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে বের হওয়া।
(খ) রেডিও টেলিভিশন থেকে জরুরি নির্দেশাবলি শোনা এবং তা মেনে চলা।
(গ) বিদ্যুৎ, গ্যাস, টেলিফোন লাইনে কোনো সমস্যা হয়েছে কি না, পরীক্ষা করে নেওয়া ও প্রয়োজনে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
(ঘ) সরকারি সংস্থাগুলোকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সহযোগিতা করা।
(ঙ) উদ্ধারকাজে নিজেকে নিয়োজিত করা। অস্থায়ী আশ্রয়স্থলে ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা। যোগাযোগব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সার্বিক সহযোগিতা করা।
ভূমিকম্প-সম্পর্কিত দুর্যোগ থেকে জীবন ও সম্পদ রক্ষার জন্য, সম্ভাব্য ভূমিকম্প মোকাবেলায় সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।
দুর্বল অবকাঠামো, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, প্রয়োজনীয় বিল্ডিং কোড না মেনে চলা এবং সর্বত্র ভবন ও কাঠামো নির্মাণের কারণে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ। যেহেতু ভূমিকম্প একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ তাই এগুলো বন্ধ করা অসম্ভব। তাই ভূমিকম্পের প্রস্তুতি ও ক্ষয়ক্ষতি প্রতিরোধে শক্তিশালী ও কার্যকর ভূমিকম্প পরবর্তী প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমেই এই দুর্যোগ মোকাবেলা করা সম্ভব।
ভূমিকম্প হলে কি কি করা উচিত, ভূমিকম্প হলে কি কি করা উচিৎ, ভূমিকম্প হলে কি কি ব্যবস্থা নেওয়া দরকার,ভূমিকম্প হলে কি করতে হবে,ভূমিকম্প হলে কি কি কৰা উচিত,ভূমিকম্প হওয়ার কারণ,ভূমিকম্প হলে করণীয় কি,ভূমিকম্প হলে কি করা উচিত,ভূমিকম্প হলে করণীয়,ভূমিকম্প কেন হয়,ভুমিকম্পে করনীয়,ভূমিকম্প হলে কি করা যাবে না,ভুমিকম্প কেন হয়,ভূমিকম্প কেন হয়,ভূমিকম্প বলতে কি বুঝায়,ভূমিকম্প হওয়ার কারণ,ভূমিকম্প কারন,ভূমিকম্প কি কেন হয়,ভূমিকম্প কারণ,ভূমিকম্প ঢাকা,