বাংলাদেশের সেরা মাদ্রাসার তালিকা ২০২৩

আজ আপনারা জানবেন বাংলাদেশের সেরা মাদ্রাসার তালিকা ২০২২ সমূহ সম্পর্কে। মাদ্রাসার হলো মূলত মুসলমানদের অধ্যয়ন ও শিক্ষাদানের স্থান বা কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। সাধারণ অর্থে মাদ্রাসা হল আরবি ভাষা ও ইসলামী বিষয় শিক্ষার একটি প্রতিষ্ঠান। মাদ্রাসার প্রাথমিক স্তরকে বলা হয় মক্তব, নূরানী বা ফোরকানিয়া মাদ্রাসা।  বাংলার প্রথম মুসলিম শাসক ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খলজি ১২০৪ খ্রিস্টাব্দে বাংলার রাজধানী গৌড়ে একটি মসজিদ ও মাদ্রাসা নির্মাণ করেন। সুলতান গিয়াসউদ্দিন ১২১২ খ্রিস্টাব্দে একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে তার বংশধর সুলতান দ্বিতীয় গিয়াসউদ্দিনও একটি মাদ্রাসা নির্মাণ করেন। মাদ্রাসা দুটি যথাক্রমে লখনুটি ও গৌড় মাদ্রাসা। হোসেন শাহ ও তার পুত্র নুসরাত শাহ গৌড়ে বেশ কয়েকটি মাদ্রাসা নির্মাণ করেন। চলুন দেরিনা করে জেনে আসি বাংলাদেশের সবচেয়ে ভালো মাদ্রাসার নাম সমূহ গুলি;

বাংলাদেশের সেরা মাদ্রাসার তালিকা

ক্রিঃ নংমাদ্রাসার নাম প্রতিষ্ঠা সালজেলা
০১তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা১৯৬৩ঢাকা
০২দারুন্নাজাত সিদ্দিকিয়া কামিল মাদ্রাসা ১৯৯০ঢাকা
০৩ঝালকাঠি এন এস কামিল মাদ্রাসা১৯৫০ঝালকাঠি
০৪চরমোনাই জামিয়া রশিদিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসা১৯২৪বরিশাল
০৫খুলনা আলিয়া কামিল মাদ্রাসা১৯৫২খুলনা
০৬ছারছিনা দারুস সুন্নাত আলিয়া মাদ্রাসা১৯১৫বরিশাল
০৭বায়তুশ শরফ আদর্শ কামিল মাদ্রাসা১৯৬২চট্টগ্রাম
০৮জামেয়া কাসেমিয়া কামিল মাদ্রাসা১৯৭৬নরসিংদী
০৯মিছবাহুল উলূম কামিল মাদ্রাসা১৯৭৫ঢাকা
১০মুস্তাফাবিয়া আলিয়া মাদরাসা১৯২৫বগুড়া

বাংলাদেশের সবচেয়ে ভালো মাদ্রাসা

বাংলাদেশের সেরা মাদ্রাসার তালিকা

তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসাঃ

তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা বাংলাদেশের একটি ধর্মীয় উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা তা’মীরুল মিল্লাত ট্রাস্ট দ্বারা পরিচালিত একটি ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। মাদ্রাসাটি ইসলামী ও আধুনিক শিক্ষার সমন্বয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ইসলামী জীবন দর্শন ও ইসলামী মূল্যবোধের উপর জোর দিয়ে। মাদ্রাসাটি বরাবরই দেশের শীর্ষস্থানীয় মাদ্রাসাগুলোর একটি। ১৯৬৩ সালে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মধ্য দিয়ে এ প্রতিষ্ঠানের সূচনা হয়। এরপর ১৯৮৮ সালে এটিকে কামিল শ্রেণীতে উন্নীত করা হয়। ১৯৯৭ সালে এর টঙ্গী ক্যাম্পাস চালু হয়।

দারুন্নাজাত সিদ্দিকিয়া কামিল মাদ্রাসাঃ

দারুন্নাজাত সিদ্দিকিয়া কামিল মাদ্রাসা ঢাকা শহরের ডেমরা থানার সারুলিয়া বাজারের কাছে অবস্থিত একটি বিখ্যাত কামিল মাদ্রাসা। এই মাদ্রাসাটি সারাদেশে জেডিসি, দাখিল ও আলিম পরীক্ষায় অসাধারণ ফলাফল করেছে। বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ-২০১৮-এ এই মাদ্রাসাটি জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচিত হয়। ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসাটি সারা দেশে সুনাম অর্জন করেছে।

ঝালকাঠি এন এস কামিল মাদ্রাসাঃ

ঝালকাঠি এন এস কামিল মাদ্রাসা বা নেছারাবাদ কামিল মাদ্রাসা বাংলাদেশের বরিশাল বিভাগের ঝালকাঠি জেলা শহরে অবস্থিত একটি স্বনামধন্য এবং জাতীয়ভাবে স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এটি ঝালকাঠি জেলার বাসন্দায় অবস্থিত। নেছারাবাদ মাদ্রাসা  ১৯৫০ সালে মাওলানা মুহাম্মদ আজিজুর রহমান কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে দাখিল, আলিম, ফাজিল ও কামিল শ্রেণী পড়ানো হয়। এর দাখিল ও আলিম শিক্ষা কার্যক্রম বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড এবং ফাজিল ও কামিল ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত। এই মাদ্রাসার ফলাফল খুবই ভালো, সারাদেশে সর্বদা শীর্ষস্থান দখল করে আছে। মাদ্রাসাটিতে দাখিল, আলিম, ফাজিল, কামিল সব শ্রেণি মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার ছাত্র রয়েছে।

চরমোনাই জামিয়া রশিদিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসাঃ

চরমোনাই জামিয়া রশিদিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসা বরিশাল জেলার চর মোনাই গ্রামে অবস্থিত একটি ইসলামী বিদ্যালয়। মাদ্রাসাটি ১৯২৪ সালে সৈয়দ মুহাম্মদ ইসহাক কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথমে এটি একটি আলিয়া মাদ্রাসা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭২ সালে সৈয়দ ফজলুল করিম মাদ্রাসার কওমি শাখা চালু করেন। বর্তমানে কওমি ও আলিয়া উভয় শাখাই খোলা আছে। কওমি শাখার মুহতামিম সৈয়দ রেজাউল করিম ও আলিয়া শাখার প্রিন্সিপাল সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী। ভারতীয় আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব রশিদ আহমেদ গাঙ্গুলীর নামে মাদ্রাসার নামকরণ করা হয়েছে ‘জামিয়া রশিদিয়া’। ২০১৬ সালে, আলিয়া শাখা বাংলাদেশের সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পুরস্কার জিতেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মাদ্রাসাটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

খুলনা আলিয়া কামিল মাদ্রাসাঃ

খুলনা আলিয়া কামিল মাদ্রাসা বাংলাদেশের খুলনা বিভাগের একটি গুরুত্বপূর্ণ আলিয়া মাদ্রাসা। এই মাদ্রাসাটি বাংলাদেশের বিভাগীয় পর্যায়ের বিখ্যাত মাদ্রাসাগুলোর একটি। এই মাদ্রাসাটি ১৯৫২ সালে খুলনা মহানগরীতে প্রতিষ্ঠিত হয়। দাখিল ও আলিম পর্যায়ের ফলাফলের দিক থেকে এ মাদ্রাসার সুনাম রয়েছে। খুলনা বিভাগের দাখিল, আলিম, ফাজিল, কামিল ইত্যাদি পরীক্ষার সময় এই মাদ্রাসাটিকে কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়। খুলনা বিভাগীয় শহরে অবস্থিত এই মাদ্রাসা আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন একটি মাদ্রাসা। শিক্ষার্থীদের সব ধরণের সুযোগ সুবিধা রয়েছে এই মাদ্রাসায়। বিশাল আকারের খেলার মাঠ, পড়াশোনার জন্য লাইব্রেরী, গবেষণাগার, বিতর্ক আয়োজনের জন্য ডিবেটিং সোসাইটি রয়েছে। এছাড়া মেয়েদের জন্য কমন রুম ও অভ্যন্তরীণ সময় কাটানোর জন্য খেলাধুলার সুযোগ রয়েছে।

ছারছিনা দারুস সুন্নাত আলিয়া মাদ্রাসাঃ

ছারছীনা দারুসসুন্নাত কামিল মাদ্রাসা কিন্তু মাদ্রাসাটি সারাদেশে শর্ষিনা দারুসসুন্নাত আলিয়া মাদ্রাসা নামেও পরিচিত। মাদ্রাসাটি বাংলাদেশের বরিশাল বিভাগের পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ উপজেলার চরছীনা গ্রামে অবস্থিত একটি বিখ্যাত আলিয়া মাদ্রাসা। মাদ্রাসাটি ১৯১৫ সালে বিখ্যাত পীর নেছারুদ্দিন আহমদ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি বাংলাদেশের প্রথম স্বীকৃত শিরোনাম মাদ্রাসা। ফলাফলের দিক থেকে এ মাদ্রাসা বরাবরই দেশের শীর্ষস্থান দখল করে আছে। এই মাদ্রাসা নৈতিকতা ও ধর্মের উপর জোর দেওয়ার জন্য সারা দেশে বিখ্যাত। এ মাদ্রাসা থেকে এ পর্যন্ত তিন শতাধিক শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। মাদ্রাসাটিতে আধুনিক সকল সুবিধা রয়েছে, নিজস্ব লাইব্রেরী, আবাসিক হল, মসজিদ, খেলার মাঠ, বিজ্ঞানাগার সহ আরো অনেক সুবিধা রয়েছে সাধারন শিক্ষার্থীদের জন্য। মাদ্রাসার আবাসিক হলে ছাত্রদের পড়াশোনা ও সার্বিক তত্ত্বাবধায়নের জন্য শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে, তারা ছাত্রদের সাহায্য ও পরিচর্যা করে থাকেন।

বায়তুশ শরফ আদর্শ কামিল মাদ্রাসাঃ

বায়তুশ শরফ আদর্শ কামিল মাদ্রাসা বাংলাদেশের একটি বিখ্যাত ধর্মীয় বিদ্যালয় এবং আলিয়া মাদ্রাসা। সংক্ষেপে বায়তুশ শরফ মাদ্রাসা নামে পরিচিত। এই মাদ্রাসাটি শাহ সুফি আব্দুল জব্বার ১৯৬২ সালে নির্মাণ করেন। প্রতিষ্ঠা করেন। মাদ্রাসাটি চট্টগ্রাম নগরীর ডবলমুরিং থানাধীন ধনিয়ালাপাড়া গ্রামে অবস্থিত। এই মাদ্রাসাটি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত প্রবেশিকা পরীক্ষায় বিভাগীয় পর্যায়ে প্রথম স্থান অধিকার করে। এরপর ২০১৬-১৭ সেশনে ২০১৬ সালে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে মাদ্রাসাটিতে দুটি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু হয়। বিষয় দুটি হলো আল কুরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ, আল হাদিস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ।

জামেয়া কাসেমিয়া কামিল মাদ্রাসাঃ

জামিয়া কাসেমিয়া কামিল মাদ্রাসা, নরসিংদী বাংলাদেশের নরসিংদী জেলার একটি বিখ্যাত আলিয়া মাদ্রাসা। স্থানীয়ভাবে মাদ্রাসাটি গাবতলী মাদ্রাসা নামে পরিচিত। মাদ্রাসা শিক্ষার প্রসারের জন্য বাংলাদেশের প্রখ্যাত আলেম কামালউদ্দিন জাফরি ১৯৮৬ সালে মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই মাদ্রাসাটি প্রায়শই ফলাফলের দিক থেকে বাংলাদেশের সকল মাদ্রাসার শীর্ষ দশে স্থান পায়। এই মাদ্রাসাটি ১৯৮৬ সালে মেঘনা বিধাউত নরসিংদী সদর থানায় গাবতলী মাদ্রাসা নামে প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা দেড় শতাধিক। জামেয়া কাসেমিয়া মাদ্রাসার ছাত্রদের নামাজ পড়ার জন্য তৈরি করা হয়েছে বিশাল আয়তনের মসজিদ। এই মসজিদের আকৃতি বায়তুল মুকাদ্দাসের আকৃতি অনুসরণ করে করা হয়েছে। মাদ্রাসার ছাত্ররা ও আশে পাশের জনগণ সালাত আদায় করেন।

মিছবাহুল উলূম কামিল মাদ্রাসাঃ

মিসবাহুল উলূম কামিল মাদ্রাসা ঢাকা জেলার মতিঝিল এ অবস্থিত একটি আলিয়া মাদ্রাসা। তবে এটি টিএন্ডটি কলোনি মাদ্রাসা নামেও পরিচিত। কোম্পানিটি ১৯৮৫ সালে যাত্রা শুরু করে। মূলত, এটি তৎকালীন পিএন্ডটি কলোনির বাসিন্দাদের শিশুদের শিক্ষিত করার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের শিক্ষার্থীরা এখানে পড়াশোনা করছে। বর্তমানে এতিম শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে শিক্ষার সুসংগঠিত ব্যবস্থা রয়েছে।  ১৯৭৫ সালে ঢাকার মতিঝিলে মিছবাহুল উলূম কামিল মাদরাসা একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। মাদ্রাসার ইউনিফ্রম ছাত্রদের সাদা পাঞ্জাবী, ছাত্রীদের ধর্মীয় হিজাব।

মুস্তাফাবিয়া আলিয়া মাদরাসাঃ 

সরকারি মুস্তাফাবিয়া আলিয়া মাদ্রাসা বগুড়া জেলায় অবস্থিত উত্তরবঙ্গের একমাত্র সরকারি ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এটি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে একটি কামিল মাদ্রাসা।


বাংলাদেশের সেরা মাদ্রাসার তালিকা, বাংলাদেশের সেরা আলিয়া মাদ্রাসার তালিকা, সেরা মাদ্রাসা, মাদ্রাসার নাম সমূহ, বিভিন্ন মাদ্রাসার নাম, মাদরাসার তালিকা, বাংলাদেশের সবচেয়ে ভালো মাদ্রাসা, দেশ সেরা মাদ্রাসা, বাংলাদেশের সেরা ১০টি মাদ্রাসার তালিকা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *